মুসলিমের হক

10734264_753560458059694_7762265671003058650_n

এতে নিবন্ধে যা থাকছে :

১. মুসলিমের হকের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
২. আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্বের অর্থ
৩. ইসলামী ভ্রাতৃত্বের ফজিলত
৪. বিভেদ ও অনৈক্য থেকে সতর্কিকরণ
ইসলাম আমাদের সুপথ দেখায়
ইসলাম একটি মহান দ্বীন। ইসলাম নির্মাণ করেছে তার অনুসারীদের
জন্য সঠিক পথ। এতে রয়েছে অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে সুন্দর
সমন্বয়। এতে কাউকে ঠকানো হয়নি। সবাইকে দেয়া হয়েছে তার
প্রাপ্ত অধিকার। ইসলাম যেসব হক বা অধিকার দিয়েছে, তার অন্যতম
হলো, এক মুসলিম ভাইয়ের ওপর অপর মুসলিম ভাইয়ের হক।
আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্বের অর্থ
আমরা জানি, মুসলিমরা আজ স্রোতে ভাসা খড়কুটার মতো মূল্যহীন
হয়ে পড়েছে। মুসলিমদের কাতার হয়ে পড়েছে টুকরো টুকরো। তারা
হয়ে পড়েছে শতধা বিভক্ত। মুসলিম উম্মাহর প্রতি সবলের চেয়ে
দুর্বল, সম্মানির চেয়ে অসম্মানী ও কাছের চেয়ে দূরের লোকরা বেশি
লালায়িত। দৃশ্যত উম্মাহ হয়ে পড়েছে বানর-শূকরের বংশধর পৃথিবীর
হীন, তুচ্ছ ও ঘৃণ্যতর জাতির জন্য একটি বৈধ বাসনের মতো। যার
ইচ্ছে তা ব্যবহার করতে পারে। যেখানে ইচ্ছে তাকে ফেলে রাখতে
পারে। এর প্রধান কারণ, বর্তমান বিশ্ব সম্মান করে শুধু সবলকে।
অথচ উম্মাহ হয়ে পড়েছে দুর্বল। কেননা বিভক্তি দুর্বলতা, ব্যর্থতা
ও ধ্বংসের প্রতীক। পক্ষান্তরে শক্তি সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও
একতার নিদর্শন।
এমন লাঞ্চনাকর ও অপমানজনকভাবে উম্মাহ তখনই বীর্যহীন
অবস্থায় আবির্ভূত হয়েছে, যখন তাদের শক্তি ও ঐক্যের উৎস
হারিয়ে গেছে। হ্যা, সেটি হলো- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কর্তৃক রচিত আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্বের বাঁধন বা ‘আল-
উখুওয়াহ ফিল্লাহ’। তাওহীদের এই নিরেট, পূর্ণাঙ্গ ও পরিব্যাপ্ত
চেতনা ছাড়া বাস্তবে এই ভ্রাতৃত্বের বাঁধনকে পুনর্জীবন দান করা
কিছুতেই সম্ভব নয়। যেমন এই ভ্রাতৃত্বচেতনা মুসলিমদের প্রথম
জামাতকে মেষের রাখাল থেকে সকল জাতি ও সকল দেশের নেতা ও
পরিচালকে রূপান্তরিত করেছিল। এ রূপান্তর ও পরিবর্তন তখনই সূচিত
হয়েছিল যখন তাঁরা পূর্ণাঙ্গ ও পরিব্যপ্ত আকীদার বুনিয়াদে গড়া এই
ভ্রাতৃত্বকে তাঁদের কর্ম ও জীবন পদ্ধতিতে বাস্তবে রূপায়িত
করেছিলেন। এই উজ্জ্বল, দ্যুতিময় ও দীপান্বিত চিত্র সেদিন ভাস্কর
হয়ে ওঠেছিল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম যেদিন
মক্কায় তাওহীদের অনুসারীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের উদ্বোধন
করেছিলেন। বর্ণ ও গোত্র এবং ভাষা ও ভূমির ভিন্নতা সত্ত্বেও
তাঁদের মধ্যে বপণ করেছিলেন এক অভূতপূর্ব ভ্রাতৃত্ব ও একতার বীজ।
ভ্রাতৃত্বের এক সুতোয় বেঁধেছিলেন তিনি কুরাইশ বংশের হামযা,
গিফারী বংশের আবূ যর আর পারস্যের সালমান, হাবশার বিলাল ও
রোমের হুসাইব রা. প্রমুখকে। একতা ও ভালোবাসার বাঁধনে জড়িয়ে
তাঁরা সবাই যেন অভিন্ন কণ্ঠে আবৃত্তি করছিলেন পবিত্র কুরআনের এ
আয়াত :
ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺇِﺧْﻮَﺓٌ ﻓَﺄَﺻْﻠِﺤُﻮﺍ ﺑَﻴْﻦَ ﺃَﺧَﻮَﻳْﻜُﻢْ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ
ﺗُﺮْﺣَﻤُﻮﻥَ ( 10 )
‘নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের
ভাইদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে
ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে।’ [সূরা আল-
হুজরাত : ১০]
তারা যেন দুলে উঠলেন নিচের এই সুমিষ্ট পঙতির দোলায়-
ﺃﺑﻰ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﻻ ﺃﺏَ ﻟﻰ ﺳِﻮَﺍﻩُ
ﺇﺫﺍ ﺍﻓﺘﺨﺮﻭﺍ ﺑﻘﻴﺲٍ ﺃﻭ ﺗﻤﻴﻢِ
কবিতাটির মর্মার্থ এমন- ‘যখন তারা কায়েস বা তামীম ইত্যাদি বংশ
নিয়ে বড়াই করছিল, ইসলাম তখন বংশ নিয়ে গর্ব ত্যাগ করে বললো,
ইসলামই আমার বাপ, ইসলাম ছাড়া আমার কোনো বংশ নেই।’
এটি ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভ্রাতৃত্ব
রচনার প্রথম পর্ব। এরপর দ্বিতীয় পর্বে সুদীর্ঘ রক্তাক্ত যুদ্ধ ও
বহুকাল ধরে চলমান সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে তিনি ভ্রাতৃত্ব গড়ে দেন
মদীনার আউস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে! তারপর তৃতীয় পর্বে তিনি
ভ্রাতৃত্ব রচনা করেন মদীনার আনসার ও মক্কার মুহাজিরগণের মাঝে।
এ ছিল মৈত্রি ও ভালোবাসার এমন উৎসব, পুরো মানবেতিহাসে যার
দ্বিতীয় উপমা নেই। হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের বন্ধন রচিত হলো। মনের
সাথে মনের মিলন হলো। এমন হৃদয়কাড়া দৃশ্যও মঞ্চায়িত হলো
বুখারী ও মুসলিমে যার বিবরণ এসেছে এভাবে :
আনাস রা. বলেন,
ﻗَﺪِﻡَ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑْﻦُ ﻋَﻮْﻑٍ ﻭَﺁﺧَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑَﻴْﻨَﻪُ ﻭَﺑَﻴْﻦَ ﺳَﻌْﺪِ ﺑْﻦِ ﺍﻟﺮَّﺑِﻴﻊِ ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻛَﺜِﻴﺮَ ﺍﻟْﻤَﺎﻝِ ﻓَﻘَﺎﻝَ
ﺳَﻌْﺪٌ ﻗَﺪْ ﻋَﻠِﻤَﺖِ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭُ ﺃَﻧِّﻲ ﻣِﻦْ ﺃَﻛْﺜَﺮِﻫَﺎ ﻣَﺎﻻً ﺳَﺄَﻗْﺴِﻢُ ﻣَﺎﻟِﻲ
ﺑَﻴْﻨِﻲ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻚَ ﺷَﻄْﺮَﻳْﻦِ ﻭَﻟِﻲ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗَﺎﻥِ ﻓَﺎﻧْﻈُﺮْ ﺃَﻋْﺠَﺒَﻬُﻤَﺎ ﺇِﻟَﻴْﻚَ
ﻓَﺄُﻃَﻠِّﻘُﻬَﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﺣَﻠَّﺖْ ﺗَﺰَﻭَّﺟْﺘَﻬَﺎ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑَﺎﺭَﻙَ ﺍﻟﻠَّﻪُ
ﻟَﻚَ ﻓِﻲ ﺃَﻫْﻠِﻚَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺮْﺟِﻊْ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﻓْﻀَﻞَ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻣِﻦْ ﺳَﻤْﻦٍ
ﻭَﺃَﻗِﻂٍ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﻠْﺒَﺚْ ﺇِﻻَّ ﻳَﺴِﻴﺮًﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺟَﺎﺀَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ، ﻭَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺿَﺮٌ ﻣِﻦْ ﺻُﻔْﺮَﺓٍ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣَﻬْﻴَﻢْ ﻗَﺎﻝَ ﺗَﺰَﻭَّﺟْﺖُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓً ﻣِﻦَ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻣَﺎ
ﺳُﻘْﺖَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻭَﺯْﻥَ ﻧَﻮَﺍﺓٍ ﻣِﻦْ ﺫَﻫَﺐٍ ، ﺃَﻭْ ﻧَﻮَﺍﺓً ﻣِﻦْ ﺫَﻫَﺐٍ ﻓَﻘَﺎﻝَ
ﺃَﻭْﻟِﻢْ ﻭَﻟَﻮْ ﺑِﺸَﺎﺓٍ .
‘আমাদের কাছে আবদুর রহমান বিন আউফ এলেন। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও সা‘দ বিন রাবী‘র মধ্যে ভ্রাতৃত্ব গড়ে
দিলেন। তিনি ছিলেন বিত্তশালী। সা‘দ রা. বললেন, আনসাররা জানে
আমি তাদের মধ্যে সবচে বেশি সম্পদশালী। আমি আপনার এবং
আমার মাঝে নিজ সম্পদ দুই ভাগে ভাগ করে নেব। আমার দুইজন
স্ত্রী আছে। আপনি দেখেন কাকে আপনার বেশি সুন্দরী মনে হয়।
আমি তাকে তালাক দেব। তারপর তার ইদ্দত শেষ হলে আপনি তাকে
বিয়ে করবেন। আবদুর রহমান বললেন, আল্লাহ আপনার সম্পদে
বরকত দিন। আপনি আমাকে বাজার কোথায় দেখিয়ে দিন। বাজার
থেকে তিনি কেবল তখনই ফিরে এলেন যখন তার কাছে অল্প কিছু মাখন
ও পনির অবশিষ্ট রয়ে গেল। ক্ষণকাল বাদেই সেখানে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন। তাঁর ওপর ছিল ….। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমানের উদ্দেশ্যে
বললেন, ‘(মাহইয়াম) ঘটনা কী?’ আবদুর রহমান বললেন, আমি এক
আনসারী মহিলাকে বিবাহ করেছি। তিনি বললেন, ‘তাকে কী দিয়েছো’?
বললেন, খেজুরের বিচি পরিমাণ স্বর্ণ অথবা বলেছেন, স্বর্ণের একটি
বিচি। তিনি বললেন, ওলীমা করো, হোক না তা একটি ছাগল
দিয়ে।’ [বুখারী : ৩৭৮১]
আজ আমরা সা‘দ বিন রবী‘ রা. -এর যুগের কথা কল্পনা করে
আফসোস করি আর বলি, কোথায় সেই সা‘দ বিন রবী‘ রা. যিনি নিজ
সম্পদ ও সহধর্মীনিকে দুই ভাগে ভাগ করবেন?!! এর উত্তর হলো,
সেদিন আর নেই। সেদিন তো তখনই বিদায় হয়েছে যেদিন আবদুর
রহমান রা. বিদায় নিয়েছেন। তেমনি যখন জিজ্ঞেস করা হয় কোন সে
ব্যক্তি যিনি সা‘দ রা.-এর মতো বদান্যতা ও মহানুভবতা দেখাবেন?
তার জবাবে বলা হবে, কোথায় সেই ব্যক্তি যিনি আবদুর রহমান রা.-
এর মতো অমুখাপেক্ষিতা প্রদর্শন করবেন?!!
আরেকটি সুন্দর ঘটনা : এক ব্যক্তি পূর্বসুরী এক বুযুর্গের কাছে গিয়ে
বললেন, কোথায় তারা –
ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻨْﻔِﻘُﻮﻥَ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻬُﻢْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ ﺳِﺮًّﺍ ﻭَﻋَﻠَﺎﻧِﻴَﺔً
‘যারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে রাতে ও দিনে এবং গোপনে ও
প্রকাশ্যে’? [সূরা আল-বাকারা : ২৭৪]
তিনি বললেন, তারা তো তাদের সাথেই অতীত হয়েছেন-
ﻟَﺎ ﻳَﺴْﺄَﻟُﻮﻥَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺇِﻟْﺤَﺎﻓًﺎ
‘যারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে চায় না।’ [সূরা আল-বাকারা : ২৭৩]
প্রিয় পাঠক, এই হলো পূর্ণাঙ্গ ও পরিব্যপ্ত আকীদার বুনিয়াদে গড়া
প্রকৃত ভ্রাতৃত্বের কিছু চিত্র। আল্লাহর কসম! এই হাদীসটি যদি
সর্বোচ্চ স্তরের একটি শুদ্ধ হাদীস না হতো, তাহলে আমি নির্ঘাত
একে একটি কাল্পনিক দৃশ্য বলে আখ্যায়িত করতাম।
হ্যা, এটিই নির্ভেজাল ভ্রাতৃত্ব। এই হলো প্রকৃত ভ্রাতৃত্ব। কারণ,
আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে কেবল আকীদার বাঁধন, ঈমানের
বন্ধন ও আল্লাহর ভালোবাসার সম্পর্কের মধ্য দিয়ে, যার শিকড়
কখনো উপড়ে পড়ে না।
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া একটি সামগ্রিক
নেয়ামত। এটি আল্লাহর এমন এক দান, প্রকৃত মুমিনদের প্রতি যা
প্রচুর ধারায় প্রবাহিত হয়। আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্ব শুভ্র ও
পরিশুদ্ধ হৃদয়ের মুমিনদের জন্য শারাবান তহুরা বা পবিত্র পানীয়
তুল্য।
মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিম ভাইয়ের হক
এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিম ভাইয়ের হক হলো তাকে
ভালোবাসা। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
ﺛَﻼَﺙٌ ﻣَﻦْ ﻛُﻦَّ ﻓِﻴﻪِ ﻭَﺟَﺪَ ﺣَﻼَﻭَﺓَ ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥِ : ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ
ﺃَﺣَﺐَّ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻣِﻤَّﺎ ﺳِﻮَﺍﻫُﻤَﺎ ، ﻭَﺃَﻥْ ﻳُﺤِﺐَّ ﺍﻟْﻤَﺮْﺀَ ﻻَ ﻳُﺤِﺒُّﻪُ ﺇِﻻَّ ﻟِﻠَّﻪِ ، ﻭَﺃَﻥْ
ﻳَﻜْﺮَﻩَ ﺃَﻥْ ﻳَﻌُﻮﺩَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻜُﻔْﺮِ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﻜْﺮَﻩُ ﺃَﻥْ ﻳُﻘْﺬَﻑَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ .
‘তিনটি গুণ যার মধ্যে রয়েছে, সে ঈমানের স্বাদ অনুভব করবে :
(১) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে গোটা সৃষ্টিজগত অপেক্ষা অধিক
প্রিয় হওয়া।
(২) মানুষকে ভালোবাসলে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা।
(৩) কুফরিতে ফিরে যাওয়া তার কাছে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো
অপ্রিয় ও অপছন্দনীয় হওয়া।’ [বুখারী : ১৬; মুসলিম : ১৭৫]
এদিকে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﺳَﺒْﻌَﺔٌ ﻳُﻈِﻠُّﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻓِﻰ ﻇِﻠِّﻪِ ، ﻳَﻮْﻡَ ﻻَ ﻇِﻞَّ ﺇِﻻَّ ﻇِﻠُّﻪُ
ﺇِﻣَﺎﻡٌ ﻋَﺎﺩِﻝٌ ، ﻭَﺷَﺎﺏٌّ ﻧَﺸَﺄَ ﻓِﻰ ﻋِﺒَﺎﺩَﺓِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﻭَﺭَﺟُﻞٌ ﺫَﻛَﺮَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻓِﻰ
ﺧَﻼَﺀٍ ﻓَﻔَﺎﺿَﺖْ ﻋَﻴْﻨَﺎﻩُ ، ﻭَﺭَﺟُﻞٌ ﻗَﻠْﺒُﻪُ ﻣُﻌَﻠَّﻖٌ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ، ﻭَﺭَﺟُﻼَﻥِ
ﺗَﺤَﺎﺑَّﺎ ﻓِﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﻭَﺭَﺟُﻞٌ ﺩَﻋَﺘْﻪُ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٌ ﺫَﺍﺕُ ﻣَﻨْﺼِﺐٍ ﻭَﺟَﻤَﺎﻝٍ ﺇِﻟَﻰ
ﻧَﻔْﺴِﻬَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧِّﻰ ﺃَﺧَﺎﻑُ ﺍﻟﻠَّﻪَ . ﻭَﺭَﺟُﻞٌ ﺗَﺼَﺪَّﻕَ ﺑِﺼَﺪَﻗَﺔٍ ﻓَﺄَﺧْﻔَﺎﻫَﺎ ،
ﺣَﺘَّﻰ ﻻَ ﺗَﻌْﻠَﻢَ ﺷِﻤَﺎﻟُﻪُ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌَﺖْ ﻳَﻤِﻴﻨُﻪُ .
‘সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আরশের নিচে ছায়া দেবেন
যেদিন তাঁর ছায়া বৈ অন্য কোনো ছায়া থাকবে না :
১. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ।
২. এমন যুবক যে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের মধ্য দিয়েই বেড়ে
উঠেছে।
৩. যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে আর তার দুই চোখ
দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়।
৪. এমন ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত।
৫. এমন দুই ব্যক্তি, যারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির
উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালোবাসে। এ উদ্দেশ্যেই একত্রিত এবং
বিচ্ছিন্ন হয়।
৬. এমন ব্যক্তি যাকে কোনো সম্ভ্রান্ত বংশীয় রূপসী নারী
ব্যভিচারের প্রতি আহ্বান করে; কিন্তু সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয়
করি।
৭. যে ব্যক্তি এমন গোপনভাবে দান করে যে, তার ডান হাত যা দান
করে বাম হাতও তা টের পায় না।’ [বুখারী : ৬৮০৬; মুসলিম : ১৭১২]
মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা রা. থেকে আরও একটি হাদীস বর্ণিত
হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
ﺃَﻥَّ ﺭَﺟُﻼً ﺯَﺍﺭَ ﺃَﺧًﺎ ﻟَﻪُ ﻓِﻰ ﻗَﺮْﻳَﺔٍ ﺃُﺧْﺮَﻯ ﻓَﺄَﺭْﺻَﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺪْﺭَﺟَﺘِﻪِ
ﻣَﻠَﻜًﺎ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺃَﺗَﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻳْﻦَ ﺗُﺮِﻳﺪُ ﻗَﺎﻝَ ﺃُﺭِﻳﺪُ ﺃَﺧًﺎ ﻟِﻰ ﻓِﻰ ﻫَﺬِﻩِ
ِ.ﺔَﻳْﺮَﻘْﻟﺍ ﻗَﺎﻝَ ﻫَﻞْ ﻟَﻚَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣِﻦْ ﻧِﻌْﻤَﺔٍ ﺗَﺮُﺑُّﻬَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻻَ ﻏَﻴْﺮَ ﺃَﻧِّﻰ
ﺃَﺣْﺒَﺒْﺘُﻪُ ﻓِﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ َّ . ﻞَﺟَﻭ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺈِﻧِّﻰ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﺑِﺄَﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ
ﻗَﺪْ ﺃَﺣَﺒَّﻚَ ﻛَﻤَﺎ ﺃَﺣْﺒَﺒْﺘَﻪُ ﻓِﻴﻪِ .
‘এক ব্যক্তি তার এক ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে অন্য গ্রামে
গেল। পথিমধ্যে আল্লাহ তা‘আলা তার কাছে একজন ফেরেশতা
পাঠালেন। ফেরেশতা তার কাছে এসে বললেন, কোথায় চললে তুমি?
বললেন, এ গ্রামে আমার এক ভাই আছে, তার সাক্ষাতে চলেছি। তিনি
বললেন, তার ওপর কি তোমার কোনো অনুগ্রহ আছে যা তুমি লালন
করে চলেছ? তিনি বললেন, না। তবে এতটুকু যে আমি তাকে আল্লাহর
জন্য ভালোবাসি। তিনি বললেন, আমি তোমার কাছে আল্লাহর
বার্তাবাহক হিসেবে এসেছি। আল্লাহ তোমাকে জানিয়েছেন যে তিনি
তোমাকে ভালোবাসেন যেমন তুমি তাকে তাঁর জন্য
ভালোবাসো।’ [মুসলিম : ৬৭১৪; ইবন হিব্বান, সহীহ : ৫৭২]
মুসলিম ও আবূ দাউদে বর্ণিত অপর এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻯ ﻧَﻔْﺴِﻰ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻻَ ﺗَﺪْﺧُﻠُﻮﺍ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﺣَﺘَّﻰ ﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﺍ ﻭَﻻَ ﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﺍ
ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺤَﺎﺑُّﻮﺍ ﺃَﻓَﻼَ ﺃَﺩُﻟُّﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻣْﺮٍ ﺇِﺫَﺍ ﻓَﻌَﻠْﺘُﻤُﻮﻩُ ﺗَﺤَﺎﺑَﺒْﺘُﻢْ ﺃَﻓْﺸُﻮﺍ
ﺍﻟﺴَّﻼَﻡَ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ .
‘যার হাতে আমার প্রাণ, তার কসম। তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে
না যাবৎ না পরিপূর্ণ মুমিন হবে। আর তোমরা পূর্ণ মুমিন হবে না
যতক্ষণ না একে অপরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন
জিনিসের কথা বলে দেব না, যা অবলম্বন করলে তোমাদের পরস্পর
ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? (তা হলো) তোমরা পরস্পরের মধ্যে
সালামের প্রসার ঘটাও।’ [মুসলিম : ২০৩; আবূ দাউদ : ৫১৯৫]
এক মুসলিমের ওপর মুসলিমের এ হকগুলোও রয়েছে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিচের হাদীসে তুলে ধরেছেন।
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﺣَﻖُّ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ﺳِﺖٌّ ﻗِﻴﻞَ ﻣَﺎ ﻫُﻦَّ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻗَﺎﻝَ
ﺇِﺫَﺍ ﻟَﻘِﻴﺘَﻪُ ﻓَﺴَﻠِّﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺩَﻋَﺎﻙَ ﻓَﺄَﺟِﺒْﻪُ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺍﺳْﺘَﻨْﺼَﺤَﻚَ
ﻓَﺎﻧْﺼَﺢْ ﻟَﻪُ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻋَﻄَﺲَ ﻓَﺤَﻤِﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻓَﺴَﻤِّﺘْﻪُ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻣَﺮِﺽَ ﻓَﻌُﺪْﻩُ
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻣَﺎﺕَ ﻓَﺎﺗَّﺒِﻌْﻪُ
‘এক মুসলিমের ওপর অন্য মুসলিমের ছয়টি হক রয়েছে। বলা হলো,
সেগুলো কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন,
(১) তুমি যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তাকে সালাম দেবে।
(২) সে যখন তোমাকে নিমন্ত্রণ করবে তা রক্ষা করবে।
(৩) সে যখন তোমার মঙ্গল কামনা করবে, তুমিও তার শুভ কামনা
করবে।
(৪) যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে, তখন তুমি
ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে।
(৫) যখন সে অসুস্থ হবে, তুমি তাকে দেখতে যাবে।
(৬) এবং যখন সে মারা যাবে, তখন তার জানাযায় অংশগ্রহণ
করবে।’ [মুসলিম : ৫৭৭৮]
এক মুসলিমের ওপর আরেক মুসলিমের আরেকটি হক হলো, তার
সম্পর্কে মনে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ পুষে না রাখা। কেননা মুমিন
হবে পরিষ্কার মনের অধিকারী। তার অন্তর হবে অনাবিল ও সফেদ।
তার হৃদয় হবে কোমল ও দয়ার্দ্র। মুমিন যখন রাতে শয়ন করে তখন
সে আল্লাহকে সাক্ষী বানিয়ে বলে পৃথিবীর কারও প্রতি তার একবিন্দু
হিংসা বা দ্বেষ নেই।
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﻻَ ﺗَﺒَﺎﻏَﻀُﻮﺍ ﻭَﻻَ ﺗَﺪَﺍﺑَﺮُﻭﺍ ﻭَﻻَ ﺗَﻨَﺎﻓَﺴُﻮﺍ ﻭَﻛُﻮﻧُﻮﺍ ﻋِﺒَﺎﺩَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﺧْﻮَﺍﻧًﺎ .
‘তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, একে অন্যের পেছনে লেগে থেকো
না এবং একে অন্যের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। বরং একে অন্যের
সাথে ভাই-ভাই ও এক আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও।’ [মুসলিম : ৬৭০৫;
মুসনাদ আহমদ : ৯০৫১]
আমরা অনেকেই হয়তো জানি না, মানুষের অন্তরের ব্যধিসমূহের
অন্যতম হলো হিংসা-বিদ্বেষ। (আল্লাহ হেফাজত করুন) অনেকে
মানুষকে সুখী দেখে হিংসা করে। তার অন্তরে আগুন জ্বলে। অথচ এই
অর্বাচীন লোক ভুলে যায় যে এই রিজিক ও সম্পদ এভাবে আল্লাহই
বণ্টন করেছেন। তাই আমাদের কর্তব্য কাউকে সুখ ও প্রাচুর্যের মধ্যে
ডুবে থাকলে দেখলে মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করা। যে আল্লাহ
তাকে এত নেয়ামত ও প্রাচুর্য দিয়েছেন তার কাছে তার জন্য আরও
বৃদ্ধির দু‘আ করা। তিনি যেন আমাকেও সম্পদ ও সুখ-প্রাচুর্য দেন সে
প্রার্থনা তার কাছেই করা। সেই নেককারদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে
আমাদেরও উচ্চারণ করা উচিত যারা বলতেন :
ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟَﻨَﺎ ﻭَﻟِﺈِﺧْﻮَﺍﻧِﻨَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺳَﺒَﻘُﻮﻧَﺎ ﺑِﺎﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥِ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺠْﻌَﻞْ ﻓِﻲ
ﻗُﻠُﻮﺑِﻨَﺎ ﻏِﻠًّﺎ ﻟِﻠَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﺭَﺀُﻭﻑٌ ﺭَﺣِﻴﻢٌ ( 10 )
‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে
আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা
ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ
রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম
দয়ালু।’ [সূরা আল-হাশর : ১০]
মুসলিমের প্রতি হিংসা না রাখা এবং তাদের জন্য হৃদয়ে ভালোবাসা
লালন করা কত বড় আমল তা বুঝতে পারবেন একটি ঘটনা শুনলে।
ঘটনাটি আনাস রা. হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন,
ﻛُﻨَّﺎ ﺟُﻠُﻮﺳًﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ َ : ﻝﺎَﻘَﻓ ” ﻳَﻄْﻠُﻊُ
ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟْﺂﻥَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ” ﻓَﻄَﻠَﻊَ ﺭَﺟُﻞٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﻧْﺼَﺎﺭِ،
ﺗَﻨْﻄِﻒُ ﻟِﺤْﻴَﺘُﻪُ ﻣِﻦْ ﻭُﺿُﻮﺋِﻪِ، ﻗَﺪْ ﺗَﻌَﻠَّﻖَ ﻧَﻌْﻠَﻴْﻪِ ﻓِﻲ ﻳَﺪِﻩِ ﺍﻟﺸِّﻤَﺎﻝِ،
ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻐَﺪُ، ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻣِﺜْﻞَ ﺫَﻟِﻚَ،
ﻓَﻄَﻠَﻊَ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻣِﺜْﻞَ ﺍﻟْﻤَﺮَّﺓِ . ﻰَﻟﻭُﺄْﻟﺍ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡُ ﺍﻟﺜَّﺎﻟِﺚُ،
ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻣِﺜْﻞَ ﻣَﻘَﺎﻟَﺘِﻪِ ﺃَﻳْﻀًﺎ، ﻓَﻄَﻠَﻊَ
ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻋَﻠَﻰ ﻣِﺜْﻞِ ﺣَﺎﻟِﻪِ ﺍﻟْﺄُﻭﻟَﻰ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻗَﺎﻡَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺗَﺒِﻌَﻪُ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦُ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ َ : ﻝﺎَﻘَﻓ ﺇِﻧِّﻲ
ﻟَﺎﺣَﻴْﺖُ ﺃَﺑِﻲ ﻓَﺄَﻗْﺴَﻤْﺖُ ﺃَﻥْ ﻟَﺎ ﺃَﺩْﺧُﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺛَﻠَﺎﺛًﺎ، ﻓَﺈِﻥْ ﺭَﺃَﻳْﺖَ ﺃَﻥْ
ﺗُﺆْﻭِﻳَﻨِﻲ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻤْﻀِﻲَ ﻓَﻌَﻠْﺖَ ؟ :َﻝﺎَﻗ . ْﻢَﻌَﻧ ﻗَﺎﻝَ ٌ : ﺲَﻧَﺃ
ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠﻪِ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺃَﻧَّﻪُ ﺑَﺎﺕَ ﻣَﻌَﻪُ ﺗِﻠْﻚَ ﺍﻟﻠَّﻴَﺎﻟِﻲ ﺍﻟﺜَّﻠَﺎﺙَ، ﻓَﻠَﻢْ
ﻳَﺮَﻩُ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﻏَﻴْﺮَ ﺃَﻧَّﻪُ ﺇِﺫَﺍ ﺗَﻌَﺎﺭَّ ﻭَﺗَﻘَﻠَّﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﻓِﺮَﺍﺷِﻪِ
ﺫَﻛَﺮَ ﺍﻟﻠﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻭَﻛَﺒَّﺮَ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻘُﻮﻡَ ﻟِﺼَﻠَﺎﺓِ . ِﺮْﺠَﻔْﻟﺍ ﻗَﺎﻝَ ﻋَﺒْﺪُ
:ِﻪﻠﻟﺍ ﻏَﻴْﺮَ ﺃَﻧِّﻲ ﻟَﻢْ ﺃَﺳْﻤَﻌْﻪُ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺇِﻟَّﺎ ﺧَﻴْﺮًﺍ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻣَﻀَﺖِ ﺍﻟﺜَّﻠَﺎﺙُ ﻟَﻴَﺎﻝٍ
ﻭَﻛِﺪْﺕُ ﺃَﻥْ ﺃَﺣْﻘِﺮَ ﻋَﻤَﻠَﻪُ، ُ : ﺖْﻠُﻗ ﻳَﺎ ﻋَﺒْﺪَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺇِﻧِّﻲ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﺑَﻴْﻨِﻲ
ﻭَﺑَﻴْﻦَ ﺃَﺑِﻲ ﻏَﻀَﺐٌ ﻭَﻟَﺎ ﻫَﺠْﺮٌ ﺛَﻢَّ، ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻟَﻚَ ﺛَﻠَﺎﺙَ ٍ : ﺭﺍَﺮِﻣ ” ﻳَﻄْﻠُﻊُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟْﺂﻥَ ﺭَﺟُﻞٌ
ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ” ِﺔَّﻨَﺠْﻟﺍ ﻓَﻄَﻠَﻌْﺖَ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟﺜَّﻠَﺎﺙَ ﻣِﺮَﺍﺭٍ، ﻓَﺄَﺭَﺩْﺕُ ﺃَﻥْ ﺁﻭِﻱَ ﺇِﻟَﻴْﻚَ
ﻟِﺄَﻧْﻈُﺮَ ﻣَﺎ ﻋَﻤَﻠُﻚَ، ﻓَﺄَﻗْﺘَﺪِﻱَ ﺑِﻪِ، ﻓَﻠَﻢْ ﺃَﺭَﻙَ ﺗَﻌْﻤَﻞُ ﻛَﺜِﻴﺮَ ﻋَﻤَﻞٍ، ﻓَﻤَﺎ
ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺑَﻠَﻎَ ﺑِﻚَ ﻣَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، َ : ﻝﺎَﻘَﻓ
ﻣَﺎ ﻫُﻮَ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ . َﺖْﻳَﺃَﺭ ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻭَﻟَّﻴْﺖُ ﺩَﻋَﺎﻧِﻲ، َ : ﻝﺎَﻘَﻓ ﻣَﺎ ﻫُﻮَ ﺇِﻟَّﺎ
ﻣَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺖَ، ﻏَﻴْﺮَ ﺃَﻧِّﻲ ﻟَﺎ ﺃَﺟِﺪُ ﻓِﻲ ﻧَﻔْﺴِﻲ ﻟِﺄَﺣَﺪٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻏِﺸًّﺎ،
ﻭَﻟَﺎ ﺃَﺣْﺴُﺪُ ﺃَﺣَﺪًﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺧَﻴْﺮٍ ﺃَﻋْﻄَﺎﻩُ ﺍﻟﻠﻪُ . ُﻩﺎَّﻳِﺇ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠﻪِ ﻫَﺬِﻩِ
ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺑَﻠَﻐَﺖْ ﺑِﻚَ، ﻭَﻫِﻲَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻟَﺎ ﻧُﻄِﻴﻖُ
‘আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম।
মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এখন তোমাদের
সামনে একজন জান্নাতী ব্যক্তি উপস্থিত হবে।’ তারপর আনসারীদের
মধ্য থেকে এক ব্যক্তি উপস্থিত হলেন। তার দাড়ি থেকে ফোঁটায়
ফোঁটায় অযুর পানি ঝরছিল। বাম হাতে তার জুতো ধরা। পরদিন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপ বললেন। প্রথম বারের
মতো ওই ব্যক্তিই উপস্থিত হলো। তৃতীয় দিন এলে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একইরকম বললেন। এবারও প্রথম বারের মতো
ওই ব্যক্তিই উপস্থিত হলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যখন বৈঠক ত্যাগ করলেন, আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আ‘স তার পিছু
নিলেন। তাকে তিনি বললেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে ঝগড়া
করেছি। এক পর্যায়ে কসম করেছি তিনদিন আমি তার কাছে যাব না।
তুমি যদি আমাকে এ সময়টুকু তোমার কাছে থাকতে দিতে? তিনি
বললেন, ঠিক আছে। আনাস রা. বলেন, আবদুল্লাহ বলতেন, তিনি তার
সাথে তিনটি রাত অতিবাহিত করেছেন। তাকে তিনি রাতে নামাজ পড়তে
দেখেননি। তবে এতটুকু দেখেছেন যে, রাতে যখন তিনি ঘুম থেকে
জাগ্রত হন, তখন তিনি পাশ ফিরে ফজরের নামাজ শুরু হওয়া পর্যন্ত
আল্লাহর জিকির ও তাকবীরে লিপ্ত থাকেন। আবদুল্লাহ বলেন, তবে
আমি তাকে ভালো ছাড়া কারও মন্দ বলতে শুনিনি। অতপর যখন তিন
রাত অতিক্রম হলো এবং আমি তার আমলকে সামান্য জ্ঞান করতে
লাগলাম। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেসই করে বসলাম, হে আল্লাহর
বান্দা, আমার ও আমার পিতার মাঝে কোনো রাগারাগি বা ছাড়াছাড়ির
ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে তোমার সম্পর্কে তিনদিন বলতে শুনেছি : ‘এখন
তোমাদের সামনে একজন জান্নাতী লোক উপস্থিত হবে।’ আর
ঘটনাক্রমে তিনবারই তুমি উপস্থিত হয়েছো। এজন্য আমি তোমার
সান্বিধ্যে এসেছিলাম তুমি কী আমল করো তা দেখতে। যাতে আমি
তোমাকে অনুসরণ করতে পারি। আমি তো তোমাকে খুব বেশি আমল
করতে দেখলাম না। তাহলে তোমার কোন আমল তোমাকে রাসূলুল্লাহ
বর্ণিত মর্যাদায় পৌঁছালো? ওই ব্যক্তি বলল, তুমি যা দেখলে তার
বেশি কিছুই নয়। তিনি বলেন, যখন আমি ফিরে আসতে নিলাম, সে
আমাকে ডাক দিলো। অতপর সে বললো, তুমি যা দেখলে তা তার
চেয়ে বেশি কিছুই নয়। তবে মনে আমি কোনো মুসলিমকে ঠকানোর
চিন্তা রাখি না এবং আল্লাহ তাকে যে নিয়ামত দিয়েছেন তাতে
কোনো হিংসা বোধ করি না। আবদুল্লাহ বললেন, ‘এটিই তোমাকে
ওই মর্যাদায় পৌঁছিয়েছে। আর এটিই তো আমরা পারি না।’ [মুসনাদ
আহমদ : ১২৬৯৭]
এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের আরেকটি হক হলো তাকে
সাধ্যমত সাহায্য করা। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﻣَﻦْ ﻧَﻔَّﺲَ ﻋَﻦْ ﻣُﺆْﻣِﻦٍ ﻛُﺮْﺑَﺔً ﻣِﻦْ ﻛُﺮَﺏِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻧَﻔَّﺲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻛُﺮْﺑَﺔً
ﻣِﻦْ ﻛُﺮَﺏِ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﺴَّﺮَ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﻌْﺴِﺮٍ ﻳَﺴَّﺮَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓِﻰ
ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﺍﻵﺧِﺮَﺓِ ﻭَﻣَﻦْ ﺳَﺘَﺮَ ﻣُﺴْﻠِﻤًﺎ ﺳَﺘَﺮَﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻰ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﺍﻵﺧِﺮَﺓِ
ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻰ ﻋَﻮْﻥِ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪِ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪُ ﻓِﻰ ﻋَﻮْﻥِ ﺃَﺧِﻴﻪِ
‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট
দূর করবে কিয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর
করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে আল্লাহ
তা‘আলা তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে ছাড় দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো
মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে
তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সাহায্য
করেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে।’ [মুসলিম : ৭০২৮;
তিরমিযী : ১৪২৫]
এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের আরেকটি হক হলো তাকে
সাহায্য করা চাই সে যালেম হোক কিংবা মযলুম। আনাস বিন মালেক
রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﺍﻧْﺼُﺮْ ﺃَﺧَﺎﻙَ ﻇَﺎﻟِﻤًﺎ ، ﺃَﻭْ ﻣَﻈْﻠُﻮﻣًﺎ : ﺍﻮُﻻَﻗ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻫَﺬَﺍ ﻧَﻨْﺼُﺮُﻩُ
ﻣَﻈْﻠُﻮﻣًﺎ ﻓَﻜَﻴْﻒَ ﻧَﻨْﺼُﺮُﻩُ ﻇَﺎﻟِﻤًﺎ ﻗَﺎﻝَ ﺗَﺄْﺧُﺬُ ﻓَﻮْﻕَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ .
‘তুমি তোমার মুসলিম ভাইকে সাহায্য করো, চাই সে অত্যাচারী হোক
কিংবা অত্যাচারিত। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, অত্যাচারিতকে সাহায্য করার অর্থ
তো বুঝে আসল, তবে অত্যাচারীকে কিভাবে সাহায্য করব? তিনি
বললেন, তুমি তার হাত ধরবে (তাকে যুলুম থেকে বাধা প্রদান
করবে)।’ [বুখারী : ২৪৪৪; বাইহাকী : ১১২৯০]
অর্থাৎ তুমি তোমার ভাইকে সর্বাবস্থায় সাহায্য করবে। যদি সে
জালেম হয় তাহলে যুলুম থেকে তার হাত টেনে ধরবে এবং তাকে বাধা
দেবে। আর যদি সে মযলুম হয় তাহলে সম্ভব হলে তাকে সাহায্য
করবে। যদিও একটি বাক্য দ্বারা হয়। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে
অন্তর দিয়ে। আর এটি সবচে দুর্বল ঈমান।
এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের আরেকটি হক হলো, তার দোষ
গোপন রাখা এবং তার ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করা। এটি সবচে বড় হক।
কারণ সে তো কোনো আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যশীল ফেরেশতা বা
তাঁর প্রেরিত রাসূল নয়। সে মানুষ; ভুল তো তার হবেই। অতএব তার
কোনো ভুল হলে তা গোপন রাখা উচিত।
আলিমগণ বলেছেন, ‘মানুষ দুই প্রকার। এক প্রকার হলো যারা মানুষের
মাঝে তাকওয়া-পরহেযগারি ও নেক আমলের জন্য সুপরিচিত। তিনি যদি
কোনো ভুল করেন বা তার কোনো পদস্খলন হয়ে যায়। তাহলে
মুমিনদের কর্তব্য হলো তা গোপন রাখা। তার দোষ অপরের কাছে
প্রকাশ না করা।
কেননা বিশুদ্ধ হাদীসে মুসনাদে আহমদ ও আবূ দাউদে বর্ণিত হয়েছে,
আবু বারযা আসলামী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﻳَﺎ ﻣَﻌْﺸَﺮَ ﻣَﻦْ ﺁﻣَﻦَ ﺑِﻠِﺴَﺎﻧِﻪِ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺪْﺧُﻞِ ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥُ ﻗَﻠْﺒَﻪُ ﻻَ ﺗَﻐْﺘَﺎﺑُﻮﺍ
ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻭَﻻَ ﺗَﺘَّﺒِﻌُﻮﺍ ﻋَﻮْﺭَﺍﺗِﻬِﻢْ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻣَﻦِ ﺍﺗَّﺒَﻊَ ﻋَﻮْﺭَﺍﺗِﻬِﻢْ ﻳَﺘَّﺒِﻊِ ﺍﻟﻠَّﻪُ
ﻋَﻮْﺭَﺗَﻪُ ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﺘَّﺒِﻊِ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻮْﺭَﺗَﻪُ ﻳَﻔْﻀَﺤْﻪُ ﻓِﻰ ﺑَﻴْﺘِﻪِ .
‘হে ওই সকল লোক যারা শুধু মুখে ঈমান এনেছে আর ঈমান তার হৃদয়ে
প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলিমের গীবত করবে না এবং তাদের দোষ
খোঁজার পেছনে লেগে থাকো না। কেননা যে তাদের দোষ খোঁজায়
লিপ্ত হয়, আল্লাহও তার পেছনে দোষ খোঁজেন। আর আল্লাহ যার
পেছনে লাগেন তিনি তাকে তার বাড়িতেই লাঞ্ছিত করে
ছাড়েন।’ [মুসনাদে আহমদ : ১৯৭৯৭; আবূ দাউদ : ৪৮৮২]
আর দ্বিতীয় প্রকার হলো, যারা প্রকাশ্যে আল্লাহর নাফরমানি করে
এবং গুনাহ প্রকাশ করে। তারা স্রষ্টা তথা আল্লাহকেও লজ্জা করে না
আবার মানুষকেও লজ্জা করে না। এরা হলো ফাজের ও ফাসেক। এদের
কোনো গীবত নেই।
ইসলামের ভ্রাতৃত্ব বংশীয় ভ্রাতৃত্বের চেয়ে বেশি মজবুত
প্রকৃত সম্পর্ক যা বিচ্ছেদে জোড়া লাগায় এবং বিভক্তিকে যুক্ত করে,
সেটি হলো, দীনের সম্পর্ক এবং ইসলামের বন্ধন। যে সম্পর্ক ও
বন্ধন পুরো ইসলামী সমাজকে একটি দেহের মতো একাত্ম করেছে।
তাকে বানিয়েছে একটি প্রাচীরের মতো, যার ইটগুলো একটি আরেকটির
সঙ্গে লেগে থাকে। দেখুন, মানুষের মাঝে এত বিভেদ ও দ্বন্দ্ব
সত্ত্বেও আরশ বহনকারী ও তাঁদের আশপাশের ফেরেশতাদের হৃদয়
আবেগাপ্লুত হয়ে উঠলো। ইরশাদ হলো,
ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺤْﻤِﻠُﻮﻥَ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵَ ﻭَﻣَﻦْ ﺣَﻮْﻟَﻪُ ﻳُﺴَﺒِّﺤُﻮﻥَ ﺑِﺤَﻤْﺪِ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ
ﻭَﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﻪِ ﻭَﻳَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭﻥَ ﻟِﻠَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻭَﺳِﻌْﺖَ ﻛُﻞَّ ﺷَﻲْﺀٍ
ﺭَﺣْﻤَﺔً ﻭَﻋِﻠْﻤًﺎ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻠَّﺬِﻳﻦَ ﺗَﺎﺑُﻮﺍ ﻭَﺍﺗَّﺒَﻌُﻮﺍ ﺳَﺒِﻴﻠَﻚَ ﻭَﻗِﻬِﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏَ
ﺍﻟْﺠَﺤِﻴﻢِ ( 7 )
‘যারা আরশকে ধারণ করে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা তাদের
রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করে এবং তাঁর প্রতি ঈমান রাখে। আর
মুমিনদের জন্য ক্ষমা চেয়ে বলে যে, ‘হে আমাদের রব, আপনি রহমত
ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব যারা
তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে
দিন। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন’।
[সূরা আল-মুমিন : ৭]
আল্লাহ তা‘আলা আয়াতে এ মর্মে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আরশ
বহনকারী ও তার আশপাশের ফেরেশতা এবং পৃথিবীর বনী আদমের যে
মধ্যে সম্পর্ক ও বন্ধন গড়ে ওঠেছে, যার কারণে এই পূণ্যময় দুআ ও
প্রার্থনা, তা হলো ঈমান বিল্লাহ বা আল্লাহর প্রতি ঈমান। কারণ
তিনি ফেরেশতাদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘তারা তাঁর প্রতি ঈমান
রাখে’ ( ﻭَﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺑِﻪِ ) অর্থাৎ তাদের বৈশিষ্ট্য হলো তাঁরা ঈমান
এনেছেন। আর বনী আদমের জন্য ফেরেশতাদের দু‘আ সম্পর্কে
বলেছেন, ( ﻭَﻳَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭﻥَ ﻟِﻠَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ) মুমিনদের (যারা ঈমান এনেছে)
জন্য তারা ক্ষমা চায়। এখানে তাদের গুণও বলা হয়েছে ঈমান। এ থেকে
বুঝা যায় মানুষ ও ফেরেশতাদের মাঝে সম্পর্কের একমাত্র বাঁধন হলো
ঈমান বিল্লাহ বা আল্লাহর প্রতি ঈমান। অতএব ঈমানই সবচে মজবুত
বন্ধন। [আযওয়াউল বায়ান]
একতা ও ঐক্যের আহ্বান
আমাদের কর্তব্য একে অপরকে সাহায্য করা এবং একে অন্যের সঙ্গে
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকা। আমাদের উচিত আল্লাহর নির্দেশ মতো
আল্লাহ তা‘আলার সব বান্দা ভাই-ভাই হয়ে থাকা। এতেই আমাদের
দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিহিত আছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ
করেন,
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻨَﺎﺯَﻋُﻮﺍ ﻓَﺘَﻔْﺸَﻠُﻮﺍ ﻭَﺗَﺬْﻫَﺐَ ﺭِﻳﺤُﻜُﻢْ ﻭَﺍﺻْﺒِﺮُﻭﺍ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﻊَ
ﺍﻟﺼَّﺎﺑِﺮِﻳﻦَ ( 46 )
‘আর তোমরা পরস্পর ঝগড়া করো না, তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে
যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য
ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’ [ সূরা আল-
আনফাল : ৪৬]
ﻭَﺍﻋْﺘَﺼِﻤُﻮﺍ ﺑِﺤَﺒْﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻔَﺮَّﻗُﻮﺍ
‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং
বিভক্ত হয়ো না।’ [সূরা আলে ইমরান : ১০৩]
অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন,
ﻭَﻛُﻮﻧُﻮﺍ ﻋِﺒَﺎﺩَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺇِﺧْﻮَﺍﻧًﺎ
‘তোমরা একে অন্যের সাথে ভাই-ভাই ও এক আল্লাহর বান্দা হয়ে
যাও।’ [বুখারী : ৬০৬৫; মুসলিম : ৬৬৯৫]
জামা‘আতের ওপর আল্লাহর হাত
আপনারা আল্লাহকে ভয় করুন এবং জেনে রাখুন জামা‘আত তথা দলের
ওপর আল্লাহর হাত। সুতরাং আপনারা আপনাদের দীনী ভাইদের সঙ্গে
থাকুন। তারা যেখানেই যান তাদের সঙ্গী হোন। আপনারা সবাই
আলাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করুন এবং বিভক্ত হবেন না। মনে
রাখবেন, একতাতেই শক্তি আর বিভক্তিতে দুর্বল। আল্লাহ তা‘আলা
আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়ে থাকার
তাওফীক দান করুন। আমীন।
লেখক: আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদনা: মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

জেনেনিন অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে ইসলাম কি বলে ?

6926894-dark-flame-hd111

আপনি কি আপনার গার্লফ্রেন্ডের
সাথে রাত
কাটিয়ে নিজেকে খুব গর্বিত
মনে করছেন? অথবা আপনার
গার্লফ্রেন্ডের সাথে রাত কাটাবেন
বলে প্ল্যান করছেন?
অথবা গার্লফ্রেন্ডকে কোন হোটেল
বা বাসায় নিয়ে দুজন
নির্জনে কিছু রোমাঞ্চকর মুহূর্ত
কাটাবেন এবং জৈবিক
চাহিদা মিটাবেন বলে ভাবছেন?
তাহলে এই পোস্টটি আপনার
জন্যই। ইসলাম সহ পৃথিবীর কোন
ধর্মে ই অবৈধ শারিরীক সম্পর্ক
সমর্থন করে না – জেনেনিন অবৈধ
সম্পর্ক নিয়ে ইসলাম
কি বলে? অনেকেই দেখি,
গার্লফ্রেন্ডের
সাথেরাত কাটিয়ে এসে,
বন্ধুদের
সাথেরাতে কি করেছে না করেছে
তা নিয়ে হাঁসি ঠাট্টা করে।
আমি তাদেরকে বলবো, ভাই
আপনি এক রাতে আর
কি মজা পাইছেন, আপনার আসল
মজাতো মৃত্যুর পরে পাবেন।
যখন ফেরেস্তারা আপনার
লিঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে জাহান্নামের
আগুনে ঝুলিয়ে লোহার
ডান্ডা দিয়ে পিটাবে, আর
আপনি চিৎকার
করতে থাকবেন……।।
আপনি এই মজার জন্য
অপেক্ষা করতে থাকুন
যদি তওবা না করে থাকেন।
কিতাবে বর্ণিত আছে,
“ব্যভিচারী নারী-পুরুষের লিংগ
রশি দ্বারা বেঁধে জাহান্নামের
আগুনে ঝুলানো হবে এবং লোহার
ডান্ডা দিয়ে তাদের
জননেন্দ্রিয়ে আঘাত করা হবে।
আঘাতের
যন্ত্রণায় যখন চিৎকার করবে,
তখন জাহান্নামের
ফেরেশতারা বলবে; পৃথিবীতে যখন
তোমরা আনন্দ ফুর্তি করতে,
হাসতে এবং আল্লাহর কথা স্মরণ
করতে না এবং তাঁকে লজ্জা পেতে না,
তখন এ চিৎকার কোথায়
ছিল”?
ইসলামে যেনার কোনো স্থান
নেই।
মৃত্যুর পর
যেনাকারী উলংগ অবস্থায় কেয়ামত
পর্যন্ত আগুনে জ্বলবে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যেনাকার

যেনাকারীনি কেয়ামত
পর্যন্ত উলঙ্গ অবস্থায়
আগুনে জ্বলতে থাকবে। [ বুখারী,
মিশকাতঃ ৪৬২১] সুতরাং ভেবে
দেখুন,
সময় থাকতেই সাবধান
হয়ে জান। এসব গার্লফ্রেন্ড
মালফ্রেন্ড বাদ দিয়ে,সোজা বিয়ে করে ফেলেন ,
বা কাউকে পছন্দ হলে সোজা বিয়ের প্রস্তাব দিন ,
আল্লাহর কাছে তওবা করে, নিয়মিত
পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করুন।
Otherwise মৃত্যুর পর
কান্নাকাটি করে কোন লাভ হবে না।
যা কান্নাকাটি করার এখনই করে নিন।
আস্তাগফিরুল্লাহ ।
আস্তাগফিরুল্লাহ । আস্তাগফিরুল্লাহ
। আল্লাহ,
আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও। আমিন।”….