ইসলামে পোশাক-পরিচ্ছদ

ভূমিকা:

পোশাক-পরিচ্ছদ মানুষের দেহ সজ্জিত
করা এবং সতর আবৃত করার মাধ্যম।
ইসলামে পেশাকের গুরুত্ব অপরিসীম। এর
দ্বারা লজ্জা নিবারণের পাশাপাশি
এটা ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অন্যতম
মাধ্যম। পোশাকের মাধ্যমে ব্যক্তির
প্রকৃতি অনুভব করা যায়। আলোচ্য নিবন্ধে
এ বিষয়ে আলোকপাত করা হ’ল।-

 

পোশাকের গুরুত্ব :

মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে যেসব
নে‘মত দান করেছেন, পোশাক তার মধ্যে
অন্যতম।

আল্লাহ বলেন –

ﻳَﺎ ﺑَﻨِﻲ ﺁﺩَﻡَ ﻗَﺪْ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻟِﺒَﺎﺳًﺎ ﻳُﻮَﺍﺭِﻱ ﺳَﻮْﺀَﺍﺗِﻜُﻢْ ﻭَﺭِﻳﺸًﺎ ﻭَﻟِﺒَﺎﺱُ ﺍﻟﺘَّﻘْﻮَﻯَ ﺫَﻟِﻚَ ﺧَﻴْﺮٌ ﺫَﻟِﻚَ ﻣِﻦْ ﺁﻳَﺎﺕِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻟَﻌَﻠَّﻬُﻢْ ﻳَﺬَّﻛَّﺮُﻭﻥَ

হে বনী-আদম আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবর্তীণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবর্তীণ করেছি সাজ সজ্জার বস্ত্র এবং পরহেযগারীর পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতেরঅন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। (আ‘রাফ ৭/২৬)

পোশাক সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন হওয়া
বাঞ্ছনীয়। মহান আল্লাহ বলেন,
ﻳَﺎ ﺑَﻨِﻲْ ﺁﺩَﻡَ ﺧُﺬُﻭْﺍ ﺯِﻳْﻨَﺘَﻜُﻢْ ﻋِﻨْﺪَ ﻛُﻞِّ ﻣَﺴْﺠِﺪٍ
ﻭَﻛُﻠُﻮْﺍ ﻭَﺍﺷْﺮَﺑُﻮْﺍ ﻭَﻻَ ﺗُﺴْﺮِﻓُﻮْﺍ ﺇِﻧَّﻪُ ﻻَ ﻳُﺤِﺐُّ
-َﻦْﻴِﻓِﺮْﺴُﻤْﻟﺍ
‘হে আদম সন্তান! প্রত্যেক ছালাতের সময়
তোমরা সাজসজ্জা গ্রহণ কর। আর খাও,
পান কর কিন্তু অপচয় করো না। অবশ্যই
তিনি অপচয়কারীদেরকে পসন্দ করেন না’
(আ‘রাফ ৭/৩১) । সুন্দর পোশাক পরিধান
সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
ﻻَ ﻳَﺪْﺧُﻞُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻰ ﻗَﻠْﺒِﻪِ ﻣِﺜْﻘَﺎﻝُ ﺫَﺭَّﺓٍ
ﻣِﻦْ ﻛِﺒْﺮٍ . ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺟُﻞٌ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮْﻥَ
ﺛَﻮْﺑُﻪُ ﺣَﺴَﻨًﺎ ﻭَﻧَﻌْﻠُﻪُ ً . ﺔَﻨَﺴَﺣ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﺟَﻤِﻴْﻞٌ
ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﺠَﻤَﺎﻝَ ﺍﻟْﻜِﺒْﺮُ ﺑَﻄَﺮُ ﺍﻟْﺤَﻖِّ ﻭَﻏَﻤْﻂُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ .
‘যার অন্তরে অনু পরিমাণ অহংকার
রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
এক ব্যক্তি বলল, মানুষ তো পসন্দ করে যে
তার পোশাক সুন্দর হোক এবং তার জুতা
সুন্দর হোক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,
আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য পসন্দ
করেন। অহংকার হ’ল হককে অস্বীকার
করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা’।[1]
পোশাকের প্রকার : ইসলামী শরী‘আতে
পোশাক তিন প্রকার। যথা- ওয়াজিব,
মুস্তাহাব ও হারাম।

ওয়াজিব পোশাক :

যে পোশাক সতর আবৃত
করে, গরম ও শীত থেকে শরীরকে রক্ষা
করে এবং ক্ষতি থেকে দেহকে হেফাযত
করে সে পোশাক ওয়াজিব।
ﻋَﻦْ ﺑَﻬْﺰِ ﺑْﻦِ ﺣَﻜِﻴﻢٍ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ﻋَﻦْ ﺟَﺪِّﻩِ ﻗَﺎﻝَ
ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﻮْﺭَﺍﺗُﻨَﺎ ﻣَﺎ ﻧَﺄْﺗِﻰ ﻣِﻨْﻬَﺎ
ﻭَﻣَﺎ ﻧَﺬَﺭُ ﻗَﺎﻝَ ﺍﺣْﻔَﻆْ ﻋَﻮْﺭَﺗَﻚَ ﺇِﻻَّ ﻣِﻦْ ﺯَﻭْﺟَﺘِﻚَ ﺃَﻭْ
ﻣَﺎ ﻣَﻠَﻜَﺖْ ﻳَﻤِﻴﻨُﻚَ ﻗَﺎﻝَ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺇِﺫَﺍ
ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡُ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻓِﻰ ﺑَﻌْﺾٍ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻥِ
ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖَ ﺃَﻥْ ﻻَ ﻳَﺮَﻳَﻨَّﻬَﺎ ﺃَﺣَﺪٌ ﻓَﻼَ ﻳَﺮَﻳَﻨَّﻬَﺎ ﻗَﺎﻝَ
ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﺣَﺪُﻧَﺎ ﺧَﺎﻟِﻴًﺎ ﻗَﺎﻝَ
ﺍﻟﻠﻪُ ﺃَﺣَﻖُّ ﺃَﻥْ ﻳُﺴْﺘَﺤْﻴَﺎ ﻣِﻨْﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ .
বাহয বিন হাকিম তার পিতা হ’তে তিনি
তার দাদা হ’তে বর্ণনা করেন। তিনি
বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল
(ছাঃ)! আমাদের আবরণীয় অঙ্গসমূহ কার
সামনে আবৃত রাখব এবং কার সামনে
অনাবৃত করতে পারি? তিনি বললেন,
তোমার স্ত্রী ও দাসী ব্যতীত সকলের
সামনে তা আবৃত রাখ। রাবী বলেন, আমি
জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
অনেক লোক যখন পরস্পর একসাথে থাকে?
তিনি বলেন, যতদূর সম্ভব কেউ যেন
অন্যের গোপন অঙ্গের দিকে না তাকায়।
রাবী বলেন, আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,
ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কেউ যখন
নির্জনে থাকে? তিনি বলেন, লজ্জার
ব্যাপারে আল্লাহ মানুষের চাইতে বেশী
হকদার’।[2]

মুস্তাহাব পোশাক :

যে পোশাকে সৌন্দর্য
আছে, তা মুস্তাহাব পোশাক।
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻰ ﺍﻷَﺣْﻮَﺹِ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴْﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺗَﻴْﺖُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰَّ
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓِﻰْ ﺛَﻮْﺏٍ ﺩُﻭْﻥٍ ﻓَﻘَﺎﻝَ
ﺃَﻟَﻚَ ٌ . ﻝﺎَﻣ ﻗَﺎﻝَ ْ . ﻢَﻌَﻧ ﻗَﺎﻝَ ﻣِﻦْ ﺃَﻯِّ ِ . ﻝﺎَﻤْﻟﺍ ﻗَﺎﻝَ
ﻗَﺪْ ﺃَﺗَﺎﻧِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻹِﺑِﻞِ ﻭَﺍﻟْﻐَﻨَﻢِ ﻭَﺍﻟْﺨَﻴْﻞِ
ﻭَﺍﻟﺮَّﻗِﻴْﻖِ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺃَﺗَﺎﻙَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻣَﺎﻻً ﻓَﻠْﻴُﺮَ ﺃَﺛَﺮُ
ﻧِﻌْﻤَﺔِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ِ . ﻪِﺘَﻣﺍَﺮَﻛَﻭ

আবুল আহওয়াছ স্বীয় পিতা হ’তে বর্ণনা
করেন তিনি বলেন, আমি নিম্নমানের
পোশাক পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে
উপস্থিত হ’লাম। তা দেখে তিনি বললেন,
তোমার কি ধন-সম্পদ আছে? আমি বললাম

হ্যাঁ। তিনি বললেন, কী ধরনের সম্পদ?
আমি বললাম, আল্লাহ আমাকে উট, ভেড়া,
ঘোড়া ও দাস-দাসী দিয়েছেন। তিনি
বললেন, তাহ’লে আল্লাহ যখন তোমাদের
ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তখন তোমার বেশ-
ভূষায় আল্লাহর নে‘মতের নির্দশন ও
করুণা প্রকাশ পাওয়া উচিত’।[3]
বিভিন্ন ইবাদতের সময়, জুম‘আ, দু’ঈদ ও
জনসমাবেশে সুন্দর পোশাক পরার গুরুত্ব
অত্যধিক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
ﻣَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﺇِﻥْ ﻭَﺟَﺪَ ﺃَﻭْ ﻣَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ
ﺇِﻥْ ﻭَﺟَﺪْﺗُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﺘَّﺨِﺬَ ﺛَﻮْﺑَﻴْﻦِ ﻟِﻴَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﺳِﻮَﻯ
.ِﻪِﺘَﻨْﻬَﻣ ْﻰَﺑْﻮَﺛ
‘তোমাদের কারো সামর্থ্য থাকলে সে
যেন তার পেশাগত কাজে ব্যবহৃত পোশাক
ব্যতীত জুম‘আর দিনের জন্য এক জোড়া
পোশাক তৈরী করে’।[4]

হারাম পোশাক :

বিভিন্ন কারণে
ইসলামে কতিপয় পোশাক নিষিদ্ধ করা
হয়েছে। সেগুলো হ’ল-

১. পুরুষের জন্য রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ
মিশ্রিত পোশাক।

২. পুরুষের জন্য
মহিলাদের পোশাক

৩. মহিলাদের জন্য
পুরুষদের পোশাক

৪. খ্যাতি ও বড়াই
প্রকাশক পোশাক

৫. ভিন্ন ধর্মীয় পোশাক
৬. আঁটসাঁট পোশাক প্রভৃতি।
১. পুরুষদের জন্য রেশমের কাপড় পরিধান
করা : পুরুষদের জন্য রেশমের কাপড় পরা
ও তার উপর বসা নিষিদ্ধ। এ মর্মে
কয়েকটি হাদীছ নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল-
ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন, ﻻَ ﺗَﻠْﺒَﺴُﻮﺍ ﺍﻟْﺤَﺮِﻳْﺮَ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻣَﻦْ ﻟَﺒِﺴَﻪُ
ﻓِﻰ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻟَﻢْ ﻳَﻠْﺒَﺴْﻪُ ﻓِﻰ ِ – ﺓَﺮِﺧﻵﺍ ‘তোমরা
রেশম পরিধান করো না। যে ব্যক্তি
দুনিয়ায় রেশম পরিধান করবে, সে
আখিরাতে তা পরিধান করতে পারবে
না’।[5]
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, ওমর (রাঃ) এক সেট পুরু রেশমের
পোশাক বিক্রয় হ’তে দেখলেন। অতঃপর
তা নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট
এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)!
এটা কিনুন, এ দ্বারা ঈদের জন্য ও
প্রতিনিধি দলগুলোর জন্য সুসজ্জিত হোন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এ পোশাক শুধু
তার জন্য, যার পরকালে এটা প্রাপ্য
নেই। এরপর বেশ কিছু দিন কেটে গেল।
তারপর একদিন রসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওমর
(রাঃ)-এর নিকট রেশমের একটি জুববা
পাঠালেন। তখন ওমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, হে
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনি বলেছেন,
এটা সে ব্যক্তির পোশাক, যার পরকালে
এটা প্রাপ্য নেই। তারপর আবার এটা
পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,
ওটা আমি তোমার পরিধানের জন্য
পাঠাইনি, পাঠিয়েছি যাতে তুমি ওটা
বিক্রয় করে নিজের প্রয়োজন মিটাতে
পার’।[6]

ﻋَﻦْ ﺣُﺬَﻳْﻔَﺔَ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗَﺎﻝَ ﻧَﻬَﺎﻧَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻥْ ﻧَﺸْﺮَﺏَ ﻓِﻰْ ﺁﻧِﻴَﺔِ
ﺍﻟﺬَّﻫَﺐِ ﻭَﺍﻟْﻔِﻀَّﺔِ، ﻭَﺃَﻥْ ﻧَﺄْﻛُﻞَ ﻓِﻴْﻬَﺎ، ﻭَﻋَﻦْ ﻟُﺒْﺲِ
ﺍﻟْﺤَﺮِﻳْﺮِ ﻭَﺍﻟﺪِّﻳﺒَﺎﺝِ، ﻭَﺃَﻥْ ﻧَﺠْﻠِﺲَ ِ . ﻪْﻴَﻠَﻋ
হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে
স্বর্ণ ও রেŠপ্যের পাত্রে পানাহার
করতে এবং রেশমের কাপড় পরিধান করতে
ও তার উপর বসতে নিষেধ করেছেন।[7]
তিনি বলেন, ওটা দুনিয়ায় তাদের জন্য
(অর্থাৎ আল্লাহর অবাধ্যদের জন্য) আর
আখিরাতে তোমাদের জন্য’।[8] এসব
হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে,
পুরুষের জন্য রেশম পরা হারাম।

রেশম পরা মহিলাদের জন্য বৈধ :

রেশমের বস্ত্র পরিধান করা মহিলাদের
জন্য হালাল। হাদীছে এসেছে,
ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻰٍّ ﻗَﺎﻝَ ﺃُﻫْﺪِﻳَﺖْ ﻟِﺮَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺣُﻠَّﺔُ ﺳِﻴَﺮَﺍﺀَ ﻓَﺒَﻌَﺚَ ﺑِﻬَﺎ ﺇِﻟَﻰَّ
ﻓَﻠَﺒِﺴْﺘُﻬَﺎ ﻓَﻌَﺮَﻓْﺖُ ﺍﻟْﻐَﻀَﺐَ ﻓِﻰ ﻭَﺟْﻬِﻪِ ﻓَﻘَﺎﻝَ
ﺇِﻧِّﻰ ﻟَﻢْ ﺃَﺑْﻌَﺚْ ﺑِﻬَﺎ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻟِﺘَﻠْﺒَﺴَﻬَﺎ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺑَﻌَﺜْﺖُ
ﺑِﻬَﺎ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻟِﺘُﺸَﻘِّﻘَﻬَﺎ ﺧُﻤُﺮًﺍ ﺑَﻴْﻦَ ِ . ﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ
আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে একটা রেশমের
পোশাক উপহার দেওয়া হ’ল। পরে তিনি
সেটি আমার নিকট পাঠিয়েন দিলেন।
আমি সেটি পরলাম। এতে তাঁর চেহারায়
অসন্তোষের চিহ্ন দেখতে পেলাম। তিনি
বললেন, ওটা তোমার নিকট এজন্য
পাঠাইনি যে, তুমি পরবে। বরং এটা
তোমার কাছে এজন্য পাঠিয়েছি যে, তুমি
ওটা টুকরো করে ওড়না বানিয়ে
মহিলাদের মধ্যে বিতরণ করবে’।[9]
২-৩. মহিলাদের পোশাক পুরুষরা ও

পুরুষের পোশাক মহিলারা পরিধান করা :

মহিলাদের জন্য নির্ধারিত বা তাদের
পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক
পুরুষদের পরিধান করা নিষিদ্ধ। তেমনি
পুরুষদের জন্য নির্ধারিত বা তাদের
পোশাকের সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক ও
মহিলাদের জন্য পরিধান করা হারাম।
হাদীছে এসেছে,
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻰْ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ﻟَﻌَﻦَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞَ ﻳَﻠْﺒَﺲُ ﻟِﺒْﺴَﺔَ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓِ
ﻭَﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓَ ﺗَﻠْﺒَﺲُ ﻟِﺒْﺴَﺔَ ِ . ﻞُﺟَّﺮﻟﺍ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নারীর পোশাক
পরিধানকারী পুরুষ এবং পুরুষের পোশাক
পরিধানকারী নারীর প্রতি অভিসম্পাৎ
করেছেন’।[10] ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে
বর্ণিত, ﻟَﻌَﻦَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟْﻤُﺘَﺸَﺒِّﻬِﻴْﻦَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ ﺑِﺎﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ،
ﻭَﺍﻟْﻤُﺘَﺸَﺒِّﻬَﺎﺕِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ِ – ﻝﺎَﺟِّﺮﻻِﺑ ‘রাসূল
(ছাঃ) পুরুষদের মধ্যে নারীর বেশ
ধারণকারীদের এবং নারীদের মধ্যে
পুরুষের বেশ ধারণকারিণীদের অভিশাপ
দিয়েছেন’।[11] ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে
আরও বর্ণিত আছে,

ﻟَﻌَﻦَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟْﻤُﺨَﻨَّﺜِﻴﻦَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ
ﻭَﺍﻟْﻤُﺘَﺮَﺟِّﻼَﺕِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ‘

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
নারীবেশী পুরুষদেরকে এবং পুরুষবেশী
নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন’।[12]

খ্যাতি বা প্রসিদ্ধি পোশাক :

যে পোশাক অন্যান্য মানুষের চেয়ে
খ্যাতি বা প্রসিদ্ধি লাভ করার জন্য
পরা হয় তা হারাম।
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣَﻦْ ﻟَﺒِﺲَ ﺛَﻮْﺏَ ﺷُﻬْﺮَﺓٍ ﺃَﻟْﺒَﺴَﻪُ
ﺍﻟﻠﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ٍ . ﺔَّﻟَﺬَﻣ َﺏْﻮَﺛ
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা
করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে
ব্যক্তি দুনিয়ায় খ্যাতির পোশাক পরবে,
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে লাঞ্ছনার
পোশাক পরাবেন’।[13]

ভিন্ন ধর্মীয় কোন পোশাক পরিধান
করা :

ভিন্ন ধর্মীয় পোশাক পরিধান করা যাবে
না। অর্থাৎ যে শোষাক অন্য কোন ধর্মের
নিদর্শন প্রকাশ করে বা পরিচয় দান
করে।
ﻋﻦ ﻋَﺒْﺪَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦَ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ ﺭَﺃَﻯ ﺭَﺳُﻮْﻝُ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋَﻠَﻰَّ ﺛَﻮْﺑَﻴْﻦِ
ﻣُﻌَﺼْﻔَﺮَﻳْﻦِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺇِﻥَّ ﻫَﺬِﻩِ ﻣِﻦْ ﺛِﻴَﺎﺏِ ﺍﻟْﻜُﻔَّﺎﺭِ
ﻓَﻼَ – ﺎَﻬْﺴَﺒْﻠَﺗ
আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আছ হ’তে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
আমার পরিধানে দু’টি রঙ্গিন কাপড়
দেখে বললেন, ‘এটা কাফিরদের কাপড়।
অতএব তা পরিধান করো না’।[14]

আঁটসাঁট পোশাক পরিধান করা :

যদি পরিধেয় পোশাক এরূপ হয় যে, আবৃত
অংশের চামড়া বা হুবহু আকৃতি তার
বাইরে থেকে ফুটে ওঠে তাহ’লে তাতে
পোশাকের উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। এরূপ
পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ। এ মর্মে
হাদীছে এসেছে,
ﻋَﻦْ ﺿَﻤْﺮَﺓَ ﺑْﻦِ ﺛَﻌْﻠَﺒَﺔَ ﺃَﻧَّﻪُ ﺃَﺗَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰَّ ﺻﻠﻰ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺣُﻠَّﺘَﺎﻥِ ﻣِﻦْ ﺣُﻠَﻞِ
ﺍﻟْﻴَﻤَﻦِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺿَﻤْﺮَﺓُ ﺃَﺗَﺮَﻯ ﺛَﻮْﺑَﻴْﻚَ ﻫَﺬَﻳْﻦِ
ﻣُﺪْﺧِﻠِﻴﻚَ َ . ﺔَّﻨَﺠْﻟﺍ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﺌِﻦِ ﺍﺳْﺘَﻐْﻔَﺮْﺕَ ﻟِﻰْ ﻳَﺎ
ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻻَ ﺃَﻗْﻌُﺪُ ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﻧْﺰِﻋَﻬُﻤَﺎ . ﻰِّﻨَﻋ
ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ
ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻀَﻤْﺮَﺓَ ﺑْﻦِ َ . ﺔَﺒَﻠْﻌَﺛ ﻓَﺎﻧْﻄَﻠَﻖَ ﺳَﺮِﻳْﻌﺎً ﺣَﺘَّﻰ
ﻧَﺰَﻋَﻬُﻤَﺎ ُ . ﻪْﻨَﻋ
যামরাহ ইবনু ছা‘লাবাহ (রাঃ) বলেন,
তিনি এক জোড়া ইয়ামানী কাপড় পরিধান
করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আগমন
করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, হে
যামরাহ! তুমি কি মনে কর যে তোমার এই
কাপড় দু’টি তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ
করাবে? যামরাহ বলেন, হে আল্লাহর
রাসূল! আপনি যদি আমার জন্য আল্লাহর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তবে আমি
বসার আগেই (এখনি) কাপড় দু’টি খুলে
ফেলব। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হে
আল্লাহ! আপনি যামরাকে ক্ষমা করে
দিন। তখন যামরাহ দ্রুত গিয়ে তার
কাপড় দু’টি খুলে ফেলেন।[15]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
ﺻِﻨْﻔَﺎﻥِ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻟَﻢْ ﺃَﺭَﻫُﻤَﺎ ﻗَﻮْﻡٌ ﻣَﻌَﻬُﻢْ
ﺳِﻴَﺎﻁٌ ﻛَﺄَﺫْﻧَﺎﺏِ ﺍﻟْﺒَﻘَﺮِ ﻳَﻀْﺮِﺑُﻮْﻥَ ﺑِﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ
ﻭَﻧِﺴَﺎﺀٌ ﻛَﺎﺳِﻴَﺎﺕٌ ﻋَﺎﺭِﻳَﺎﺕٌ ﻣُﻤِﻴﻼَﺕٌ ﻣَﺎﺋِﻼَﺕٌ
ﺭُﺀُﻭﺳُﻬُﻦَّ ﻛَﺄَﺳْﻨِﻤَﺔِ ﺍﻟْﺒُﺨْﺖِ ﺍﻟْﻤَﺎﺋِﻠَﺔِ ﻻَ ﻳَﺪْﺧُﻠْﻦَ
ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻭَﻻَ ﻳَﺠِﺪْﻥَ ﺭِﻳْﺤَﻬَﺎ ﻭَﺇِﻥَّ ﺭِﻳْﺤَﻬَﺎ ﻟَﻴُﻮﺟَﺪُ ﻣِﻦْ
ﻣَﺴِﻴْﺮَﺓِ ﻛَﺬَﺍ – ﺍَﺬَﻛَﻭ
‘দু’শ্রেণীর জাহান্নামীকে আমি
দেখিনি। প্রথম শ্রেণী-যাদের হাতে
থাকবে গরুর লেজের ন্যায় ছড়ি, তা
দ্বারা তারা লোকদেরকে প্রহার করবে।
দ্বিতীয় শ্রেণী- ঐ সকল রমণী, যারা
বস্ত্র পরিহিতা অথচ উলঙ্গ, পুরুষদেরকে
নিজেদের প্রতি আকৃষ্টকারিণী এবং
নিজেরাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের
মাথা হবে লম্বা গ্রীবাবিশিষ্ট উটের
চুঁটির ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ
করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না।
অথচ জান্নাতের সুগন্ধি এত এত দূর
থেকেও পাওয়া যাবে’।[16]
ছাহাবী-তাবেঈগণ পুরুষের কামীছ
(কামীছ বা পিরহান) চাদর ও পাগড়ির
ক্ষেত্রে পাতলা কাপড়ের ব্যবহারে
আপত্তি করেননি।
ইকরিমাহ বলেন, ইবনু আববাস (রাঃ)-এর
একটি পাতলা চাদর ছিল। আবীদাহ
বলেন, আমি প্রখ্যাত তাবেঈ ফকীহ
কাসেম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর
ছিদ্দীককে একটি পাতলা স্বচ্ছ কামীছ
বা জামা পরিহিত দেখেছি। আফলাহ
বলেন, কাসেম ইবনু মুহাম্মাদকে একটি
পাতলা চাদর পরিহিত অবস্থায়
দেখেছি। আনীস আবুল উরইয়ান বলেন,
হাসান ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আলী ইবনু
আবী তালিব একটি পাতলা ও স্বচ্ছ
পাগড়ি ও অনুরূপ একটি কামীছ পরিধান
করতেন। জামাটি এত স্বচ্ছ ছিল যে, তার
নিচের ইযার বা লুঙ্গি দেখা যেত।[17]
অতএব পুরুষের ফরয সতর আবৃত হ’লে বাকী
দেহের জন্য পাতলা কাপড়ের পোশাক
পরিধান আপত্তিকর নয়। তবে আঁটসাঁট ও
সতর প্রকাশকারী পোশাক সর্বাবস্থায়
বর্জনীয়।

🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹

[1] . মুসলিম হা/৯১; আবু দাউদ হা/৪০৯২;
তিরমিযী হা/১৯৯৯; মিশকাত হা/৫১০৮।
[2] . আবু দাউদ হা/৪০১৭; ইবনু মাজাহ
হা/১৯২০; তিরমিযী হা/২৭৬৯; মিশকাত
হা/৩১১৭, সনদ হাসান।
[3] . আবূদাঊদ হা/৪০৬৩; মিশকাত
হা/৪৩৫২, সনদ ছহীহ।
[4] . আবূদাঊদ হা/১০৭৪; ইবনু মাজাহ
হা/১০৯৬; মিশকাত হা/১৩৮৯, সনদ
ছহীহ।
[5] . মুসলিম হা/২০৬৯; ছহীহুল জামে‘
হা/৭৪৪৪।
[6] . বুখারী হা/৯৪৮, ৩০৫৪; মুসলিম
হা/২০৬৮; নাসাঈ হা/১৫৬০।
[7] . বুখারী হা/৫৮৩৭; মিশকাত
হা/৪৩২১।
[8] . বুখারী হা/৫৬৩৩, ৫৮৩১; আবু দাউদ
হা/৩৭২৩; তিরমিযী হা/১৮৭৩।
[9] . মুসলিম হা/২০৬৮; মিশকাত
হা/৪৩২২।
[10] . আবূদাঊদ হা/৪০৯৮; মিশকাত
হা/৪৪৬৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৫০৯৫।
[11] . বুখারী; মিশকাত হা/৪৪২৯।
[12] . বুখারী; মিশকাত হা/৪৪২৮।
[13] . ইবনু মাজাহ হা/৩৬০৬; মিশকাত
হা/৪৩৪৬, সনদ হাসান।
[14] . মুসলিম হা/২০৭৭; মিশকাত
হা/৪৩২৭; ছহীহুল জামে‘ হা/২২৭৩।
[15] . মুসনাদ আহমাদ হা/১৯৪৯৪;
সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩০১৮।
[16] . মুসলিম; মিশকাত হা/৩৫২৪।
[17] . ইবনু সা‘দ, আত-তাবাকাত ৫/১৯১,
৩২৮; ইবনু আবী শায়বা, আল-মুছন্নাফ
৫/১৫৭।

কিয়ামতের দিন সাফায়ত

hqdefault

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরে কিছু গোশত (হাদিয়া) এল, পরে এর বাছর অংশটি তার সামনে (আহারের উদ্দেশ্যে) পেশ করা হলো। বাহুর গোশত তার কাছে খুবই পছন্দনীয় ছিল। এরপর তিনি তা থেকে এক কামড় গ্রহণ করলেন। তারপর বললেন, কিয়ামত দিবসে আমিই হব সকল মানুষের সর্দার। তা কিভাবে তোমরা জানো? কিয়ামত দিবসে যখন আল্লাহ তা’আলা শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষকে একই মাঠে এমনভাবে জমায়েত করবেন যে, একজনের আহবান সকলে শুনতে পাবে, একজনের আহবান সকলকে দেখতে পাবে। সূর্য নিকটবতী হবে। মানুষ অসহনীয় ও চরম দুঃখ-কটূ ও পেরেশানীতে নিপতিত হবে। নিজেরা পরস্পর বলাবলি করবে, কী দুর্দশায় তোমরা আছ , দেখছ না? কী অবস্হায় তোমরা পৌছেছ উপলব্ধি করছ না? এমন কাউকে দেখছ না, যিনি তোমাদের পরওয়ারদিগারের কাছে তোমাদের জন্য সুপারিশ করবেন? তারপর একজন আরেকজনকে বলবে, চল, আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাই। অনন্তর তারা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে এবং বলবে, হে আদম! আপনি মালবকুলের পিতা, আল্লাহ- স্বহস্তে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার দেহে রূহ ফুকে দিয়েছেন। আপনাকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন ; তাঁরা আপনাকে সিজদা করেছে। আপনি দেখছেন না আমরা কি কষ্টে আছি? আপনি দেখছেন না আমরা কষ্টের কোন সীমায় পৌছেছি? আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে বলবেনঃ আজ পরওয়ারদিগার এত বেশি ক্রোধাম্বিত আছেন যা পূর্বে কখনো হননি, আর পরেও কখনও হবেন না। তিনি আমাকে একটি বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন, আর আমি সেই নিষেধ লঙ্ঘন করে ফেলেছি, ‘নাফসী’, নাফসী’, আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো কাছে গিয়ে চেষ্টা কর, তোমরা নূহের কাছে যাও। তখন তারা নূহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে ; বলবে, হে নূহ! আপনি আমাদের প্রথম রাসুল। আল্লাহ আপনাকে “চির কৃতজ্ঞ বান্দা” বলে উপাধি দিয়েছেন। আপনার পরুওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্হায় আছি? অ্যমাদের অবস্হা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? নূহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলবেনঃ আজ আমার পরওয়ারদিগার এত ক্রোধানিত আছেন যে এমন পূর্বেও কখনো হননি আর কখনও হবেন না। আমাকে তিনি একটি দুঁআ কবুলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আর তা আমি আমার জাতির বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে ফেলেছি ‘নাফসী’, ‘নাফসী’ , -আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও। তখন তারা ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে। বলবে, হে ইবরাহীম! আপনি আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , পৃথিবীবাসীর মধ্যে আপনি আল্লাহর খলীল ও অন্তরঙ্গ বন্ধু। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্হায় আছি এবং আমাদের অবস্হা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বলবেনঃ আল্লাহ আজ এতই ক্রোধানিত আছেন যে, পূর্বে এমন কখনও হন নাই আর পরেও কখনও হবেন না। তিনি তাঁর কিছুঁ বহ্যিক অসত্য কথনের বিষয় উল্লেখ করবেন। বলবেন, -‘নাফসী”, ‘নাফসী’ , -আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো কাছে যাও। মূসা র কাছে যাও। তারা মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে, বলবে, হে মূসা! আপনি আল্লাহর রাসুল, আপনাকে তিনি তাঁর রিসালাত ও কালাম দিয়ে মানুষের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্হায় আছি এবং আমাদের অবস্হা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বলবেনঃ আজ আল্লাহ এতই ক্রোধানিত অবস্হায় আছেন যে, পূর্বে এমন কখনো হন নাই আর পরেও কখনো হবেন না। আমি তার হুকুমের পূর্বে এক ব্যাক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম। ‘নাফসী’, ‘নাফসী’ আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও। তারা ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে এবং বলবে, হে ঈসা! আপনি আল্লাহর রসূল, দোলনায় অবস্হানকালেই আপনি মানুষের সাথে বাক্যালাপ করেছেন, আপনি আল্লাহর দেওয়া বানী, যা তিনি মারইয়ামের গর্ভে ঢেলে দিয়েছিলেন, আপনি তাঁর দেওয়া আত্মা। সুতরাং আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেকছেন না, আমরা কোন অবস্হায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন অবস্থায় পৌছেছে? ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলবেনঃ আজ আল্লাহ তা’আলা এতই ক্রোধান্বিত অবস্থায় আছেন যে, এরূপ না পূর্বে কখনও হয়েছেন, আর না পরে কখনো হবেন। উল্লেখ্য, তিনি কোন অপরাধের কথা উল্লেখ করবেন না। তিনি বলবেন, ‘নাফসী’, ‘নাফসী’-আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা জন্য কারো কাছে যাও। মুহাম্মাদ -এর কাছে যাও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তখন তারা আমার কাছে আসবে এবং বলবে, হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর রাসুল, শেষ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সকল ক্রটি ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? তখন আমি সুপারিশের জন্য যাব এবং আরশের নিচে এসে পরওয়ারদিগারের উদ্দেশে সিজদাবনত হব। আল্লাহ আমার অন্তরকে সূপ্রশস্ত করে দিবেন এবং সর্বোত্তম প্রশংসা ও হামদ জ্ঞাপনের ইলহাম করবেন, যা ইতিপূর্বে কাউকেই দেয়া হয়নি। এরপর আল্লাহ বলবেন, হে মুহাম্মাদ! মাথা উত্তোলন করুন, প্রার্থনা করুন, আপনার প্রার্থনা কবুল করা হবে। সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ “গ্রহণ করা হবে”। অনন্তর আমি। মাথা তুলব। বলব হে পরওয়ারদিগার! উম্মাতী, উম্মাতী, -আমার উাম্মাত, আমার উম্মাত, (এদেরকে মুক্তি দান করুন)। আল্লাহ বলবেন, হে মুহাম্মদ! আপনার উম্মতের যাদের উপর কোন হিসাব নেই, তাদেরকে জান্নাতের ডান দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। অবশ্য অন্য তোরণ দিয়েও অন্যান্য লোকের সঙ্গে তারা প্রবেশ করতে পারবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ শপথ সে সত্তার, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, জান্নাতের দুই চৌকাঠের মধ্যকার দূরত্ব মক্কার ও হাজরের দূরত্বের মত ; অথবা বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ও বসরার দূরত্বের মত। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩২৭}